ব্ল্যাক বক্স (Black box) কী এবং এটি কীভাবে ফ্লাইটে কাজ করে ?

সম্প্রতিক সময়ে যেসব বিমান দুর্ঘটনা গুলি হয়েছে তার মধ্যে গত ১২ই জুন ২০২৫ গুজরাটের আমেদাবাদে লন্ডনগামী বিমান দুর্ঘটনাটি অন্যতম।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখনও দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি।
এই প্রসঙ্গে ব্ল্যাক বক্সের গুরুত্ব যে কতখানি সেটি আপনারা এই প্রতিবেদন পড়লে বুঝতে পারবেন।

লেখক/লেখিকা : Ranjana Pal

তথ্য সূত্র :Time Machine”-80’s & 90’s Memory Facebook Group.

black box

Black Box (ব্ল্যাক বক্স) : বিমান দুর্ঘটনা ঘটলেই আমাদের মনে হাজারো প্রশ্ন জাগে – এরোপ্লেন এত বড়, এত আধুনিক এক যন্ত্র, কী করে হঠাৎ ভেঙে পড়ল? ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গেল? নাকি মেকানিক্যাল কোনো গোলমাল? আবহাওয়া খারাপ ছিল? নাকি কেউ ইচ্ছে করেই কিছু করল? নাশকতা? পাইলট ভুল করলেন? এইসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে গেলে আমাদের জানতে হবে দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে বিমানের ভিতরে কী ঘটেছিল! পাইলটরা ককপিট এ বসে কী কথা বলছিল। ঠিক কী যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছিল? সেগুলো জানতে পারলে তবেই রহস্যের সমাধান সম্ভব। আর এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করে একটা ছোট্ট, কিন্তু অসাধারণ শক্তিশালী জিনিস – ব্ল্যাক বক্স।

“ব্ল্যাক বক্স” আসলে দুটো আলাদা আলাদা যন্ত্র নিয়ে তৈরি:

১. ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR): এই যন্ত্রটা বিমানের ককপিটে শেষ দু’ঘণ্টার সব কথা-বার্তা রেকর্ড করে। পাইলট-কোপাইলটের মধ্যে কথা, ক্রুদের আলোচনা, আর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (ATC) সঙ্গে যোগাযোগ – সবই এতে ধরা থাকে। এর মাইক্রোফোন এতই সেনসিটিভ যে, ইঞ্জিনের আওয়াজ, হঠাৎ বেজে ওঠা অ্যালার্ম বা বাইরের শব্দও রেকর্ড করতে পারে।

২. ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (FDR): এই যন্ত্রটা বিমানের চলাফেরার নানা রকমের তথ্য জমা রাখে। যেমন:
* বিমান কত জোরে উড়ছে (বাতাসের সাপেক্ষে আর মাটির সাপেক্ষে গতি)
* বিমান কত উঁচুতে উড়ছে
* ইঞ্জিন ঠিকমতো চালাচ্ছে কিনা (জোর, ঘূর্ণন, গরম হওয়া)
* ফ্ল্যাপ বা রাডার ঠিক জায়গায় আছে কিনা
* কতটুকু জ্বালানি আছে, কত খরচ হচ্ছে
* বিমান ঠিক কোথায় আছে (জিপিএসের সাহায্যে)
* বাতাসের চাপ, তাপমাত্রা, বিমানটা সামনে-পিছনে বা ডানে-বাঁয়ে কতটা হেলেছে
এই FDR প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০০ বার ডাটা সংগ্রহ করে, ফলে দুর্ঘটনার প্রতিটা মুহূর্তের খুঁটিনাটি জানা যায়।

এই দুটো যন্ত্র সাধারণত বিমানের পিছনের দিকে (টেল সেকশনে বা ল্যাজের দিকে ) বসানো থাকে। কারণ দুর্ঘটনার সময় বিমানের সামনের অংশের চেয়ে পেছনের অংশ কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটা ব্ল্যাক বক্সের ওজন প্রায় ৭ থেকে ১০ কেজি, আর আকারটা অনেকটা একটা জুতোর বাক্সের মতো।

ব্ল্যাক বক্স এমনভাবে বানানো হয় যে ভয়ানক পরিস্থিতিতেও এর কিছু হয় না:

মজবুত খোল: টাইটেনিয়াম বা খুব শক্ত স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি, যা সহজে ভাঙে না বা মরিচা ধরে না।

তাপ সহ্য ক্ষমতা: ভেতরে তাপ ঠেকানোর বিশেষ পদার্থ (সিলিকা জেলের মতো) থাকে, যা ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আধ ঘণ্টা আর ২৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকে।

চাপ সহ্য ক্ষমতা: সমুদ্রের ৬০০০ মিটার (২০,০০০ ফুট) গভীরতার ভয়ানক চাপও সহ্য করতে পারে।

আঘাত সহ্য ক্ষমতা: বিমান ভেঙে পড়ার মতো প্রচণ্ড আঘাত (মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ৩৪০০ গুণ!) সামলাতে পারে।

রাসায়নিক প্রতিরোধ: জ্বালানি, তেল বা লবণাক্ত জলেও এর ডাটা নষ্ট হয় না।

স্মৃতিশক্তি: নতুন ব্ল্যাক বক্সে সলিড-স্টেট মেমরি (মোবাইল ফোন বা পেনড্রাইভের মতো) থাকে, যা আগের টেপের সিস্টেমের চেয়ে অনেক নির্ভরযোগ্য আর প্রায় ২৫ ঘণ্টার ডাটা ধরে রাখতে পারে।

ব্ল্যাক বক্সের (Black Box) আরেকটা দারুণ জিনিস হলো এর “আন্ডারওয়াটার লোকেটর বিসন” (ULB)। যদি বিমান সমুদ্রে পড়ে, তাহলে এই ULB জলের নীচে ৩০ দিন পর্যন্ত প্রতি সেকেন্ডে একটা বিশেষ ধরনের শব্দ সংকেত (‘পিং’) পাঠায়। এই সংকেত সমুদ্রের প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার (১৪,০০০ ফুট) গভীরতা থেকেও শোনা যায়। অবশ্য, ULB-এর ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলে বা ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ে গেলে এটা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

ব্ল্যাক বক্স বানানোর পরই এর পরীক্ষা করা হয় – প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দেওয়া হয়, তীব্র আগুনে পোড়ানো হয়, গভীর সমুদ্রের জলের চাপ দিয়ে চাপা হয়, লবণাক্ত জলে ডোবানো হয় – যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সত্যিই কোনো পরিস্থিতিতেই এটা নষ্ট হবে না।

তাই বিমানটা ভেঙে পড়ুক, বিমানে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যাক, ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে যাক, গভীর সমুদ্রের তলায় ডুবে যাক বা গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যাক – এই যন্ত্রটা কিন্তু অক্ষত থাকে। আর এটাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভাণ্ডার। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ব্ল্যাক বক্সের রং কালো নয়! নামটা এসেছে ১৯৫০-এর দশকে, যখন প্রথম ফ্লাইট রেকর্ডারগুলোর খোল কালো রঙের হতো। আজকালকার ব্ল্যাক বক্স উজ্জ্বল কমলা বা লালচে-গোলাপি রঙের হয়, ধ্বংসাবশেষের ভেতর বা সমুদ্রের তলায় সহজে চোখে পড়ার জন্য। এই রঙের পাশাপাশি, এর গায়ে ফ্লুরোসেন্স টেপ লাগানো থাকে, আলো পড়লেই যেটা চকচক করে ওঠে। অবশ্য দুর্ঘটনার জন্য ব্ল্যাক বক্সগুলি দুমড়ে মুচড়ে যায় (ছবিতে দেখুন)!

ব্ল্যাক বক্সের আইডিয়াটা প্রথম মাথায় আসে অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ডেভিড ওয়ারেনের, ১৯৫৩ সালে। একটা বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি ভাবেন, পাইলটদের কথাবার্তা আর ফ্লাইটের ডাটা যদি রেকর্ড করা থাকত, তাহলে কারণ বোঝা অনেক সহজ হতো। ১৯৫৮ সালে প্রথম CVR তৈরি হয়, আর ১৯৬০-এর দশকে যাত্রীবাহী বিমানে FDR রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। এখনকার ব্ল্যাক বক্সে আধুনিক মেমরি আর উন্নত সেন্সর ব্যবহার করা হয়। ভবিষ্যতে হয়তো এই ডাটা ক্লাউডে বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে রিয়েল টাইমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

দুঃখের বিষয়, সবসময় যে ব্ল্যাকবক্স খুঁজে পাওয়া যাবেই সেরকম নয়। যেমন, ২০১৪ সালের মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট MH370-এর ব্ল্যাক বক্স আজও পাওয়া যায়নি। ভারত মহাসাগরে বিমানের কিছু টুকরো পাওয়া গেলেও, ব্ল্যাক বক্স না পাওয়ায় সেই দুর্ঘটনা এখনো রহস্য হয়ে আছে। ২০০৯ সালে এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৪৭(এয়ারবাস A330) বিমানটি রিও ডি জানেইরো থেকে প্যারিস যাওয়ার সময় অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে পড়ে। ২২৮ জনের মৃত্যু হয়, এবং ব্ল্যাক বক্সগুলো প্রথমে উদ্ধার করা যায়নি। পরে দুই বছর পর ১৩,০০০ ফুট গভীরতা থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে, আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায়, ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা গিয়েছে, যেটা তদন্তে খুবই সাহায্য করবে। তাই বর্তমানে ব্ল্যাক বক্সের জন্য আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। যেমন:

রিয়েল-টাইম ডাটা: গবেষকরা চেষ্টা করছেন যাতে ব্ল্যাক বক্সের ডাটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সঙ্গেসঙ্গেই (রিয়েল টাইমে) জমা হতে থাকে। তাহলে ব্ল্যাক বক্স হারিয়ে গেলেও ডাটা হারাবে না।

বেশি পাওয়ারফুল ব্যাটারি: জলের তলায় সংকেত পাঠানো ULB-এর ব্যাটারি ৩০ দিনের বদলে ৯০ দিন চালানোর চিন্তা চলছে।

বিচ্ছিন্ন হওয়ার ক্ষমতা: কিছু নতুন বিমানে এমন ব্ল্যাক বক্স আছে, যা দুর্ঘটনার সময় নিজে থেকে বিমান থেকে আলাদা হয়ে প্যারাশুটে ভেসে দূরে কোথাও গিয়ে পরে। ধ্বংস স্তূপে না পড়ায় খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।

আসলে বিমান দুর্ঘটনার পর চোখে দেখেছে এমন লোকের বর্ণনা প্রায়ই পাওয়া যায় না, আর পাওয়া গেলেও তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। কিন্তু ব্ল্যাক বক্স কখনো মিথ্যা বলে না! CVR আর FDR থেকে পাওয়া তথ্য একসাথে মিলিয়ে দেখে তদন্তকারীরা খুব নিখুঁতভাবে বলতে পারেন দুর্ঘটনার কারণটা কী – ইঞ্জিন খারাপ হয়েছিল, পাইলট ভুল করেছিলেন, খারাপ আবহাওয়ার প্রভাব ছিল, নাকি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করেছিল।

এক যুদ্ধের গল্প। কার সাথে কার যুদ্ধ? না হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিদ্যুতের যুদ্ধ (Electric vs Hydrogen) যুদ্ধটা অবশ্য ওরা দুজন করছে না। যুদ্ধটা করছি হচ্ছে আমরা।

গল্পটা হল, অনেকেই বলছেন, যে আমাদের মবিলিটির ভবিষ্যৎ আসলে হাইড্রোজেন। আবার আমার মতন কিছু উৎপটাং পাবলিক বলছেন, না না হাইড্রোজেন কিন্তু আসতে এখনো অনেক দেরি আছে। অ্যাকচুয়ালি ভবিষ্যৎ কিন্তু বিদ্যুতেরই হতে চলেছে। এবার এই প্রসঙ্গে আমার একটা গল্প মনে পড়ল।

The World’s Deadliest Plane Crashes: History, Causes & Lessons

The recent Air India Plane crashes after takeoff in Ahmedabad has once again brought the terrifying reality of aviation disasters into focus. While flying remains one of the safest modes of transportation, history has witnessed several catastrophic crashes that have left deep scars.

Was yesterday’s accident the biggest in history? 

This blog is more than just a collection of technical articles—it’s a platform where practical insights meet real-world applications. Whether you’re looking for in-depth electrical engineering concepts, startup ideas, or the latest industry trends, you’ll find valuable resources to support your career and business aspirations.

Leave a Comment